দাজ্জালের পরিচয় জন্মের দিন সকালে কি ঘটেছিল || দাজ্জালের বাবা মা কে || Dajjal
দাজ্জালের জন্মের সময় কী কী ঘটনা ঘটেছিল?
এবং তারা কি মানুষ ছিল নাকি অন্য কিছু? শিশু অবস্থায় দাজ্জালের এমন কিছু ব্যবহার ছিল যা জানলে আপনি চমকে উঠবেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মসজিদের মিম্বরে উঠে বললেন, মুক্তির দিন আর মুক্তির দিন কী? এই কথা তিনি তিনবার বলেছিলেন। এটি বলার কারণ কী ছিল? প্রিয় বন্ধুরা, শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে জুড়ে থাকুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখুন।
দাজ্জালের আবির্ভাব ও দাজ্জালের পরিচয়?
দাজ্জালের আবির্ভাব কিয়ামতের অন্যতম বড় নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। তাই আল্লাহর সব নবী রাসুলই তাদের জাতি ও অনুসারীদের দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ এমন কোন নবীকে প্রেরণ করেননি, যিনি তার উম্মতকে একচোখা, মিথ্যাবাদী দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে এক চোখা আর তোমাদের প্রতিপালক একচোখা নন। তার দুই চোখের মাঝে কাফির লেখা থাকবে, যা প্রত্যেক ইমানদার ব্যক্তি পড়তে পারবে। তিনি আরও বলেছেন যে, দাজ্জাল পৃথিবীতে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে এবং মানুষকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করবে। এ সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন। এর মধ্যে প্রথম দিন হবে একটি বছরের মতো, দ্বিতীয় দিন হবে একটি মাসের মতো আর তৃতীয় দিন হবে সপ্তাহের মতো এবং তার বাকি দিনগুলো স্বাভাবিক দিনের মতো হবে।
দাজ্জালের বাবা এবং মায়ের আসল পরিচয় কী ছিল?
মসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তাঁর পিতা ও মাতা তিরিশ বছর ধরে সন্তানহীন ছিলেন। এরপর তাদের একটি এক চোখা পুত্রসন্তান জন্ম নেয়, যেটি ছিল সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং সবচেয়ে কম উপকারী। তার চোখ দুটি ঘুমিয়ে পড়ত কিন্তু তার হৃদয় জাগ্রত থাকত। তার পিতা ছিলেন দীর্ঘকায়, মাংসল গড়নের এবং তার নাক ছিল পাখির ঠোঁটের মতো বাঁকানো। তার মা ছিলেন বেশ মোটা এবং লম্বা হাত বিশিষ্ট। অর্থাৎ দাজ্জালের পিতা ছিলেন দীর্ঘকায়। কিন্তু শরীরে তেমন মাংস ছিল না। আর তার মা ছিলেন বেশ ভারী লম্বা। হাত ও বড় বক্ষ বিশিষ্ট এই সন্তান এক চোখা অবস্থায় জন্ম নেয় এবং দিন রাত ঘুমিয়ে থাকত। সে খুব সামান্যই দুধ পান করত। যার ফলে তার মায়ের শরীরে অতিরিক্ত দুধ জমে গিয়ে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়। এরপর তার পিতা ছাগল ও গরুর দুধ খাইয়ে তাকে বড় করতে থাকে। দাজ্জাল সব সময় ঘুমিয়ে থাকত। এমনকি তাঁর পিতা অনেক সময় ধরে ভাবতেন যে সে হয়তো মারা গেছে। নিশ্চিত হতে তিনি তার বুকের কাছে কান লাগিয়ে হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন, তার চোখ ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু তার হৃদয় কখনও ঘুমাবে না। সে ছিল একপ্রকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত যে নিজের জায়গা ছেড়ে নড়াচড়া করতে পারত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দাজ্জালের চেহারা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের মাঝে দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করে বলেন। মাসীহ দাজ্জাল তার ডান চোখে এক চোখা হবে। তার চোখ হবে ফোলানো আঙ্গুরের মত উঁচু। দাজ্জাল মিথ্যাভাবে দাবি করবে যে, সে ই আল্লাহ। তাঁর দেখানো নানা চমকপ্রদ ঘটনা ও মিথ্যা অলৌকিক কাণ্ড দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে বিশ্বাস করবে। দাজ্জাল মানুষের ঈমান পরীক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের ফিতনা ও প্রতারণার আশ্রয় নেবে। তার সঙ্গে থাকবে জান্নাত ও জাহান্নামের মত কিছু। তবে যে জিনিসকে সে জান্নাত বলবে সেটিই আসলে জাহান্নাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের তাকে নিয়ে সতর্ক করেছি। যেমন নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর জাতিকে সতর্ক করেছিলেন, দাজ্জালের ফিতনা হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর পরীক্ষা। কারণ আল্লাহ তাআলা তাঁকে এমন সব অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা দেবেন, যা মানুষের চিন্তাশক্তিকে হতবাক করে দেবে। খ্রিস্টানরা মনে করবে যে, সেই ঈসা ইবনে মারইয়াম। যখন সে প্রকাশ পাবে তখন প্রথমে ইরানের ইস্পাহান নগরী থেকে সত্তর হাজার ইহুদি তার অনুসরণ করবে। সে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বাতাসের গতির মতো দ্রুত ছুটে বেড়াবে। যা দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। মানুষ তার ভয়ে পালিয়ে লুকিয়ে থাকবে। কারণ সে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি স্থানে পৌঁছে যাবে। তবে সে মক্কা ও মদিনার সীমানায় প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ সেখানকার রক্ষক ফেরেশতারা তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেবে না।
দাজ্জালের আগমন?
ইবনে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন খুতবায় বললেন, মুক্তির দিন আর এই মুক্তির দিন কী? এই কথা তিনি তিনবার বললেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মুক্তির দিন কী? তিনি বলেন, দাজ্জাল যখন আসবে তখন সে ওহুদ পাহাড়ে উঠে মদীনার দিকে তাকিয়ে তার অনুসারীদের বলবে, তোমরা কি এই সাদা প্রাসাদটি দেখতে পাচ্ছ? এটি নবী মুহাম্মদ এর মসজিদ। তারপর সে মদীনার দিকে তাকাবে। কিন্তু শহরের প্রতিটি প্রবেশপথে তলোয়ার উঁচিয়ে ফেরেশতাগণ পাহারা দেবেন। এরপর সে খেজুর নামক অঞ্চলের এক সমতল ভূমিতে অবস্থান নেবে এবং সেখানে তাবু স্থাপন করবে। তখন মদীনা তিনবার ভূমিকম্পের মতো কাঁপবে। ফলে শহরের সব মুনাফিক, পাপাচারী নারী পুরুষ দাজ্জালের দিকে বেরিয়ে যাবে। সেটাই হবে মুক্তির দিন যেদিন মদীনার মুনাফিক ও পাপাচারীদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। দাজ্জালের সঙ্গে থাকবে দুটি নদী।
একটি সে জান্নাতের নদী বলে দাবি করবে আর অন্যটি জাহান্নামের নদী হিসেবে পরিচয় দিবে। মানুষ তার তথাকথিত জান্নাতের পানি পান করতে চাইবে। কিন্তু সেটি আসলে জলন্ত আগুন হবে। আর যে ব্যক্তি তার জাহান্নাম বলে দাবীকৃত নদীতে প্রবেশ করবে সে আসলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহতালা তার সঙ্গে শয়তানদের পাঠাবেন যারা মানুষদের সঙ্গে কথা বলবে এবং ভয়ঙ্কর ফিতনার সৃষ্টি করবে। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দেবে। ফলে মানুষের চোখের সামনে বৃষ্টি হবে এবং যমিনে ফসল গজাবে।
দাজ্জাল নিজেকে খোদা দাবী করবে?
সে একজন মানুষকে হত্যা করবে এবং সবার সামনে আবার জীবিত করে বলবে, হে মানুষ! এই কাজ কি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতে পারে? এই কথা শুনে অনেকে তাকে সত্যিকারের প্রভু মনে করে বিশ্বাস করবে এবং তার অনুসারী হবে। ধীরে ধীরে তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে আর তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কেবল অল্প সংখ্যক প্রকৃত মুমিন তার ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। তারা সিরিয়ায় জাবাল আদ দুখান নামক স্থানে আশ্রয় নেবে। তখন দাজ্জাল তাদের ঘেরাও করবে এবং চরম কষ্টের মুখে ফেলবে। ফলে তারা ভয়াবহ দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে। দাজ্জালের প্রধান অনুসারীরা হবে ইহুদি এবং তুর্কি জাতির মধ্যে বেশ কিছু লোক। এছাড়া মরু অঞ্চলের কিছু বেদুইন এবং নারীরাও তার অনুসারীদের মধ্যে বেশি থাকবে।
দাজ্জালের মৃত্যু কিভাবে হবে?
রাসুল বলেছেন, ঠিক চল্লিশ দিন শেষে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তিনি হলেন প্রকৃত মসীহ। আর দাজ্জাল হলো মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তালা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন এবং নির্ধারিত সময়ে তিনি পুনরায় পৃথিবীতে নেমে আসবেন দাজ্জালকে পরাজিত করার জন্য। সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে অবতরণ করবেন সিরিয়ার দামেস্ক শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত সাদা মিনার সংলগ্ন স্থানে। এরপর তিনি ফিলিস্তীনের লুত নামক স্থানে দাজ্জালকে ধরে ফেলবেন এবং সেখানে তাকে হত্যা করবেন। এভাবেই দাজ্জালের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে যাবে এবং তার সৃষ্টি করা ফিতনার অবসান হবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url